ব্যাংকিং খাত বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়

বেহাল ব্যাংকিং খাত, জমি দখলের মতো এখন ব্যাংকও দখল হয়ে যাচ্ছে। "সংখ্যা আরও বাড়ানোর অর্থ হবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া" বাংলাদেশ ব্যাংক।
জমি দখলের মতো ব্যাংকও দখল হচ্ছে

বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে ব্যাংকিং খাত। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক এতটাই বেড়ে গেছে যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সেগুলো চালু রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যমান বেসরকারি চালু ব্যাংকগুলো যেখানে ভালো চলছে না, সেখানে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে।

নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন তিনটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাও যথারীতি আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাওয়া হলে তারা ‘নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া যাবে না’ বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ফের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়েছে এবং ‘সর্বোচ্চ পর্যায়’ থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি আছে বলে জানানো হয়। অতীতে যেমনটি হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত অনাপত্তিপত্র দিতে বাধ্য হবে।

এই সরকারের মেয়াদে গত পৌনে চার বছরে যে নয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ভালো চলছে না। অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করে কোনো কোনো ব্যাংক ব্যবসা চালাচ্ছে। সম্প্রতি ফারমার্স ব্যাংকের দুরবস্থার খবর ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টনক নড়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকটসহ নানা সংকটে জর্জরিত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে এটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।

আরও উদ্বেগের খবর হলো সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা কেবল ব্যাংকের মালিকই হচ্ছেন না, কেউ কেউ ব্যাংক দখলেরও চেষ্টা করেছেন, এখনো করছেন। খোদ অর্থমন্ত্রী চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের অর্থের উৎস তদন্তের কথা বলেছেন। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, ‘জমি দখলের মতো এখন ব্যাংকও দখল হয়ে যাচ্ছে।’ বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
ব্যাংকিং ব্যবসার মূল শক্তিই হলো আমানতকারীদের আস্থা। সেই আস্থায় ঘাটতি হলে কেবল দেশের ব্যাংকিং খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সার্বিক অর্থনীতিতেও বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এ অবস্থায় সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনোভাবেই নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।

অর্থমন্ত্রী এর আগে ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর তাগিদ দিয়েছিলেন। এখন সেই সংখ্যা আরও বাড়ানোর অর্থ হবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া। আশা করি সরকারের চৈতন্যোদয় হবে। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া থেকে সরকার বিরত থাকবে।

সূত্র:
স্মার্টনেস কাকে বলে?


আপনার মতামত প্রকাশ করুন

আপনার ই-মেইল গোপন থাকবে। চিহ্নিত স্থান পূরণ করা আবশ্যক